একটা উপন্যাস হয় বৃক্ষ কিংবা নদীর মতো। সেখানে অনেকগুলো চরিত্র থাকে। সেই সব চরিত্রদের থাকে ভিন্ন ভিন্ন জীবনাখ্যান। সেই সব আখ্যানও সরলরেখায় চলে না। জীবনে নানান বাঁক, মোড় আসে, সেই সব মোড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে উপন্যাসের আরো শাখা-প্রশাখা-উপশাখা। চরিত্রের ব্যাপকতা থাকলেও 'বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর' উপন্যাসটি আবর্তিত হয়েছে মূলত পাঁচটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে। চরিত্রগুলো হলো, অধরা, ইনিত্রিয়া, তন্ময়, লীলাপদ্ম এবং নিঃশব্দ।
উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায় অধরার সাথে পরিচয় হয় অরূপের, যে একজন কবি। তাদের মধ্যে এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠতা, প্রেম হয়। ইনিত্রিয়ার জীবনে ঘটে গিয়েছে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, কিংবা বলা, যায় সে হয় নিষ্ঠুর এক প্রতারণার শিকার আর সেই প্রতারণার ভার বইতে বইতে সে প্রতি রাতে এক একটি আত্মহত্যা স্থগিত রাখে নিজেকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে। বিপন্নতার বশবর্তী হয়ে সে বেপরোয়া, দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে আশেপাশের মানুষদের প্রতি। সবই যেন তার কাছে পরিণত হয় এক ধরনের খেলায়। তবে সে খেলাও অর্থহীন নয়, বরং এর পেছনে নিহিত রয়েছে তার কিছু উদ্দেশ্য। সে অনিবার্যকে লঙ্ঘন করতে চায়। তন্ময়, যার পরিবার ভেঙে গিয়েছে, তার মা বিয়ে করেছেন দ্বিতীয় এক পুরুষকে। শুরু হয় মায়ের সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন। এক পর্যায়ে সে সিদ্ধান্ত নেয় দেশের বাইরে তার বাবার কাছে চলে যাবার। কিন্তু মায়ের সাথে তার বর্তমান যে সম্পর্ক, সেটাই কি তার এই সিদ্ধান্ত নেবার একমাত্র কারণ, না-কি এর পেছনে লুকায়িত আছে আরো গভীর, গূঢ় কোনো যন্ত্রণা, যা তাকে পলায়নবাদী করে তুলেছে? উপন্যাসের শুরুতে আরো দেখা যায় নিঃশব্দ আর লীলাকে। চার বছর একত্রে সংসার করার পর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে। নিঃশব্দ প্রাক্তন স্ত্রীর স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সর্বক্ষণ। অথচ তার অনুভূতিগুলো মূক, নিঃস্বর। লীলা স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাইলেও ব্যাখ্যাতীত এক দহন তাকে সারাক্ষণ তিলে তিলে নিঃশেষ করতে থাকে। সেই দহনের কারণ তার কাছে কিছুটা স্পষ্ট হলেও অনেকখানিই অস্পষ্ট। এসব ব্যথা-বিষাদ-বিনিদ্রা-বিবশতা নিয়েই এগিয়ে যেতে থাকে উপন্যাসটি। পরিশেষে এই সব চরিত্রদের কী পরিণতি হয় তা জানতে হলে পড়তে হবে 'বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর'।