Author : সজল রোশন
নবীর প্রজ্ঞা কি বলার কথা কি বলছি
Author : সজল রোশন
ক্যাটাগরি: ইসলামি আদর্শ ও মতবাদ
1 Rating / 5 Review
মসজিদে নববীতে প্রতিদিন পাঁচ বার সমাজের সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে কোরআন পড়া হতো| আর রাসূল (সঃ) এর সাথে যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বা কোরআনের পাঠচক্রে অংশ নিতো তাদের জন্য কোরআন তো বাংলা| অর্থাৎ কোরআন তাঁদের মাতৃভাষা; কোরআন বোঝার জন্য তাদের তো আলাদা করে ভাষা-ব্যাকরণ কিছুই শেখার প্রয়োজন ছিলো না| ঐতিহাসিক সূত্র মতে আরবের বিভিন্ন গোত্র তাদের আঞ্চলিক ভাষায় কোরআন পাঠ করতো এবং আঞ্চলিক ভাষায়ই কোরআন লিখতো| হজরত ওসমানের (রাঃ) সময়ে সঙ্গত কারণে কোরআনের আঞ্চলিক কপিগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়| রাসূল (সঃ) এর সময়ে মানুষ তাদের আঞ্চলিক ভাষায় কোরআন পড়তো| অর্থাৎ কোরআন পাঠ ছিলো পাঠকের পরিচিত ও বোধগম্য ভাষায়।
সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কোরআনের পাঠচক্রে অংশ নিতে পারতো এটাই ছিলো সে সময়ের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের সাথে কোরআনের অন্যতম প্রধান পার্থক্য| মধ্যযুগের ইয়োরোপে (পঞ্চম থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত) সামাজিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বন্টন তিনটি ভাগে (estates of the realm) বিভক্ত ছিল যার (First Estate) প্রথম ভাগ ছিলো Clergy ধর্মযাজক শ্রেণী (the body of all people ordained for religious duties, especially in the Christian Church.) এই ধর্মগুরুরা ছাড়া কেউ ধর্মগ্রন্থ পড়া তো দূরের কথা সাধারণ মানুষ বাইবেল স্পর্শও করতে পারতো না| ধর্মগুরুরা যা বলতো তাই ছিলো ধর্ম| অসংখ্য নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয় ধর্ম অবমাননার দায়ে| উইচ হান্টের নামে হাজার হাজার নারীকে ডাইনি আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে| ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৯-১৭৯৯) মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় ধর্মের নামে যাজক শ্রেণীর অত্যাচার-নিপীড়ণের অন্ধকার যুগের| হিন্দু সমাজেও এক সময় নিন্ম বর্ণের হিন্দুরা বেদ পড়তে বা শুনতে পারতো না| পুণ্যের নামে অগণিত বিধবা নারীকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়েছে পুরোহিতরা| যখন মানুষ নিজের ভাষায় বেদ-বাইবেল পড়তে শুরু করলো, ধর্মগুরুদের ধুতি খুলে গেল।
ইসলামের নবী সারা জাহানের আলোক বর্তিকা হয়ে এসেছেন| অজ্ঞতা, অবিচার আর কুসংস্কারের অন্ধকার অসময়ে তিনি সাম্য, সৌহার্দ আর ন্যায় বিচারের আলো জ্বালিয়েছেন| জাত-পাত, গোত্র-বর্ন আর শ্রেণী বৈষম্যের বিষাক্ত পৃথিবীতে তিনি আল্লাহর কিতাবের পাঠচক্রে আমীর-কামার সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছেন| ধনী-ঋণী সবাইকে এক মজলিশে বসিয়েছেন| বেগম-দাসী সবাইকে তাঁর মসজিদে প্রবেশাধিকার দিয়েছেন| এতিম-অভাবী মানুষকে তাঁর জান্নাতের সিঁড়ি বানিয়েছেন।
ধর্মীয় অভিজাত শ্রেণীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কোরআন পড়তে সাধারণ মানুষকে ফরাসি বিপ্লব করতে হয়নি| ফরাসি বিপ্লবের হাজার বছর আগে নবী মোহাম্মদ আরবের ধুলামলিন বেদুইনদের কোরআনের আলোয় আলোকিত করে সারা জাহানের অধিপতি বানিয়েছেন| কিন্তু নবীর উত্তরাধিকারের নামে আমাদের ধর্মগুরুরা মধ্যযুগের পোপ-পুরোহিত সেজে বসে আছে| এই কথিত আল্লামারা সতীদাহ আর উইচ হান্ট যুগের অন্ধকার আমদানি করেছে ইসলাম ধর্মে| কোরআন আর সাধারণ মানুষের মাঝে হাদিস-তাফসীর, ভাষা-ব্যাকরণের এক অদৃশ্য দেয়াল তুলে কোরআনকে প্রস্তর যুগের দুর্ভেদ্য শিলালিপি বানিয়েছে| মদিনা-আল আজহার থেকে গুপ্তজ্ঞান অর্জন না করলে নাকি কেউ কোরআন বুঝবে না| প্রতিটা মুসলমান মাতৃভাষায় বুঝে বুঝে কোরআন পড়লে এসব আল্লামা আবু জেহেলরা মধ্যযুগের পোপ-পুরোহিতদের মত মনের দুঃখে বনে চলে যাবে।
সজল রোশন , নিউ ইয়র্ক
['হাদিসের সালাত বনাম আমাদের নামাজ' অধ্যায়
রিলিজিয়াস মাইন্ডসেট ২ : নবীর প্রজ্ঞা ..বই থেকে]
Title | রিলিজিয়াস মাইন্ডসেট - ২ |
---|---|
Author | সজল রোশন |
Publisher | মেরিট ফেয়ার প্রকাশন |
Number of Pages | 212 |
Country | Bangladesh |
Language | বাংলা |
Best book