ফেরারি বসন্ত

Author : আফিফা পারভীন

List Price: Tk. 800

Tk. 664 You Save 136 (17%)

এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ‘সময়’, যে একাধারে নায়ক ও খলনায়ক। পুরো উপন্যাসে এই ‘সময়’ কোনো মানুষ কিংবা কোনো জনগোষ্ঠীর জীবনে কখনো এসেছে গ্রীষ্মের খরতাপ হয়ে, কখনো এসেছে বর্ষার ঝুম বৃষ্টি হয়ে। কখনো কারও জীবনে ‘সময়’ বয়ে নিয়ে এসেছে রঙিন বসন্ত, আবার কারও বসন্তকে করে দিয়েছে ফেরারি। একটা ব্যাপক ও বিস্তৃত ‘সময়’কে কথাবন্দি করার প্রয়াসই হলো ‘ফেরারি বসন্ত’ ।

সকাল আটটা দশ, পনেরোই জুন, উনিশ শ সাতানব্বই সাল। গায়ে জ্বালা ধরানো রোদটা সাতসকালেই চিড়বিড় করে উঠেছে। বাংলা দিনপঞ্জি অনুসারে বর্ষাকাল এলেও এই সময়টায় আবহাওয়া কিশোরীর মতোই চঞ্চলা। কোনো দিন একঘেয়ে ঘ্যান ঘ্যান বৃষ্টি তো কোনো দিন ঝকঝকে রোদে ভেসে যাওয়া পৃথিবী। আজ মনে হয় আকাশের মন ভালো, তাই বৃষ্টি নেই। আর সেই সুযোগে সূর্যটা মহারাজার মতো বিপুল বিক্রমে ঘুম থেকে উঠেই শ্যামল বাংলাকে ঝলসানো শুরু করেছে।

পুরান ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি ইউনিভার্সিটি, যার আশপাশে রয়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হাইকোর্ট, বাংলাবাজার, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল আর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট। এত সব কিছু থাকার জন্য এই ইউনিভার্সিটির সামনে সব সময়ই একটা অসহ্য রকমের ট্রাফিক জ্যাম থাকে। রিকশা, সিএনজিচালিত গাড়ি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, মুড়ির টিন নামক অদ্ভুতদর্শন কিছু বাস, সব মিলিয়ে পুরো এলাকায় ভজকট পাকিয়ে থাকে। কোনো কারণে যদি রাস্তা ফাঁকা থাকে কখনো, তাহলে ব্যাপারটা সবার কাছে কেমন যেন অস্ব মনে হয়।

আজও আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই ভার্সিটি ছাত্রছাত্রীদের কলরবে মুখর। গেটের সামনেই সাদা সালোয়ার-ওড়না ও হালকা গোলাপি রঙের জামা পরিহিত একটি মেয়ে রিকশা থেকে নেমে হড়বড় করে ভাড়া দিল। মেয়েটির নাম হৈমন্তী বিনতে আশফাক। খুচরো টাকা ফেরত পেতে দেরি হচ্ছে, তাই তার কপাল কুঁচকে আছে। অন্য কেউ হলে ভীষণ তাড়ার মধ্যে এই পাঁচ টাকার জন্য দাঁড়িয়ে থাকত না। কিন্তু সে পাঁচ টাকা রেখে চলে যেতে পারছে না। কারণ, যেখানে তার একটা টাকাও হিসাব করে চলতে হয়, সেখানে পাঁচ টাকা তো অনেক বড় ব্যাপার।

হৈমন্তী এখানে বোটানিতে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। শ্যামবর্ণের মায়াবী চেহারার বছর বিশেকের হৈমন্তীর উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। তার জলে ভাসা পদ্মের মতো চোখে সব সময় একটা টলটলে ভাব থাকে। যাকে বলে 'লিকুইড আইজ', তার চোখ ওই রকম। তবে ভারী কাচের চশমার আড়ালে সেই সম্মোহনী চোখের মাধুরী চাপা পড়ে থাকে। চাপা নাকটি বেশ সুন্দর, গোলাপি ঠোঁট দুটো ভরাট। তার চেহারার সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো থুতনিতে একটি গভীর খাজ, যেই খাজে পৃথিবীর সব আদর লুকানো থাকে। সে যখন হাসে, তখন তার ডান দিকের একটি গজদন্তের জন্য ঠোঁট একটু বেঁকে ওপরে উঠে যায়। 

Title ফেরারি বসন্ত
Author আফিফা পারভীন
Publisher অন্যপ্রকাশ
Country Bangladesh
Language বাংলা
author_avater

আফিফা পারভীন

আফিফা পারভীন এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মানো এই লেখক উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বাবা মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ও বই পড়ার নেশাটা রপ্ত করেছেন সেই ছোটবেলা থেকে। ফলশ্রুতিতে, লক্ষীমন্ত মেয়ে হয়েও শুধু পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পড়ার জন্যই প্রায়ই বকা খেতে হতো। সারাদিন মুখের সামনে বই থাকলেও সে বইগুলো পাঠ্যবই হতো কদাচিৎ। মা বলতেন, তিনি নাকি বই পড়তেন না, বই গিলতেন। এই পড়ার নেশার কারণে অল্প বয়সেই জুটেছিলো বই পোকার খেতাব।

পড়ালেখা শেষে গাঁটছড়া বাঁধেন সামরিক কর্মকর্তার সাথে জড়িয়ে যান নিয়ম কানুনে ভরপুর সুশৃঙ্খল এক অভিনব জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে। নিজের মতো করে জীবনে চাওয়া ও পাওয়ার হিসেব মেলানোয় দক্ষ আফিফা পারভীন সংসারের মায়ায় নিজের ক্যারিয়ারকে হাসিমুখে বিসর্জন দেন। অনেকেই বলে ভীষণ বোকামি করেছে ক্যারিয়ার সচেতন না হয়ে। কিন্তু ক্যারিয়ার, উন্নতি, সফলতা এই শব্দগুলো শুনতে সবার কাছে একরকম হলেও ব্যতিক্রমী এই ব্যক্তিত্ব এসবকে অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করেন। দিন শেষে স্বামী-সন্তানদের হাসিমুখ ও সফলতাই বেশি কাম্য বলে বেহিসেবী আর বোকা থাকাটাই ভালো মনে করেছেন।

লেখালেখির প্রতি এই মানুষটার আগ্রহটা জন্মেছে খুব কাছ থেকে দেখা অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা তুলে ধরার তাড়না থেকে। আফিফা পারভীন জীবনকে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যেমন দেখেন, তেমনি অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখার চেষ্টা করেন। ব্যক্তিগতভাবে নম্র, ভদ্র আর স্বল্পভাষী এ মানুষটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজস্ব জীবনদর্শন মেনে চলেন। মাই লাইফ, মাই রুলস্ - এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী আফিফা উপভোগ করার চেষ্টা করেন জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত, যাতে বেলাশেষে আফসোস না থাকে। ছোট্ট জীবনের এই পথচলায় পিছনে ফিরে তাকালে তিনি একটা কথাই বলেন সমস্ত কিছুর জন্য আল্হামদুলিল্লাহ।


Submit Your review and Ratings

Please Login before submitting a review..