Author : আফিফা পারভীন
ক্যাটাগরি: সমকালীন উপন্যাস
0 Rating / 0 Review
এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ‘সময়’, যে একাধারে নায়ক ও খলনায়ক। পুরো উপন্যাসে এই ‘সময়’ কোনো মানুষ কিংবা কোনো জনগোষ্ঠীর জীবনে কখনো এসেছে গ্রীষ্মের খরতাপ হয়ে, কখনো এসেছে বর্ষার ঝুম বৃষ্টি হয়ে। কখনো কারও জীবনে ‘সময়’ বয়ে নিয়ে এসেছে রঙিন বসন্ত, আবার কারও বসন্তকে করে দিয়েছে ফেরারি। একটা ব্যাপক ও বিস্তৃত ‘সময়’কে কথাবন্দি করার প্রয়াসই হলো ‘ফেরারি বসন্ত’ ।
সকাল আটটা দশ, পনেরোই জুন, উনিশ শ সাতানব্বই সাল। গায়ে জ্বালা ধরানো রোদটা সাতসকালেই চিড়বিড় করে উঠেছে। বাংলা দিনপঞ্জি অনুসারে বর্ষাকাল এলেও এই সময়টায় আবহাওয়া কিশোরীর মতোই চঞ্চলা। কোনো দিন একঘেয়ে ঘ্যান ঘ্যান বৃষ্টি তো কোনো দিন ঝকঝকে রোদে ভেসে যাওয়া পৃথিবী। আজ মনে হয় আকাশের মন ভালো, তাই বৃষ্টি নেই। আর সেই সুযোগে সূর্যটা মহারাজার মতো বিপুল বিক্রমে ঘুম থেকে উঠেই শ্যামল বাংলাকে ঝলসানো শুরু করেছে।
পুরান ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি ইউনিভার্সিটি, যার আশপাশে রয়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হাইকোর্ট, বাংলাবাজার, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল আর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট। এত সব কিছু থাকার জন্য এই ইউনিভার্সিটির সামনে সব সময়ই একটা অসহ্য রকমের ট্রাফিক জ্যাম থাকে। রিকশা, সিএনজিচালিত গাড়ি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, মুড়ির টিন নামক অদ্ভুতদর্শন কিছু বাস, সব মিলিয়ে পুরো এলাকায় ভজকট পাকিয়ে থাকে। কোনো কারণে যদি রাস্তা ফাঁকা থাকে কখনো, তাহলে ব্যাপারটা সবার কাছে কেমন যেন অস্ব মনে হয়।
আজও আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই ভার্সিটি ছাত্রছাত্রীদের কলরবে মুখর। গেটের সামনেই সাদা সালোয়ার-ওড়না ও হালকা গোলাপি রঙের জামা পরিহিত একটি মেয়ে রিকশা থেকে নেমে হড়বড় করে ভাড়া দিল। মেয়েটির নাম হৈমন্তী বিনতে আশফাক। খুচরো টাকা ফেরত পেতে দেরি হচ্ছে, তাই তার কপাল কুঁচকে আছে। অন্য কেউ হলে ভীষণ তাড়ার মধ্যে এই পাঁচ টাকার জন্য দাঁড়িয়ে থাকত না। কিন্তু সে পাঁচ টাকা রেখে চলে যেতে পারছে না। কারণ, যেখানে তার একটা টাকাও হিসাব করে চলতে হয়, সেখানে পাঁচ টাকা তো অনেক বড় ব্যাপার।
হৈমন্তী এখানে বোটানিতে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। শ্যামবর্ণের মায়াবী চেহারার বছর বিশেকের হৈমন্তীর উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। তার জলে ভাসা পদ্মের মতো চোখে সব সময় একটা টলটলে ভাব থাকে। যাকে বলে 'লিকুইড আইজ', তার চোখ ওই রকম। তবে ভারী কাচের চশমার আড়ালে সেই সম্মোহনী চোখের মাধুরী চাপা পড়ে থাকে। চাপা নাকটি বেশ সুন্দর, গোলাপি ঠোঁট দুটো ভরাট। তার চেহারার সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো থুতনিতে একটি গভীর খাজ, যেই খাজে পৃথিবীর সব আদর লুকানো থাকে। সে যখন হাসে, তখন তার ডান দিকের একটি গজদন্তের জন্য ঠোঁট একটু বেঁকে ওপরে উঠে যায়।
Title | ফেরারি বসন্ত |
---|---|
Author | আফিফা পারভীন |
Publisher | অন্যপ্রকাশ |
Country | Bangladesh |
Language | বাংলা |